অংশগ্রহণমূলক শিক্ষণ-শিখন পদ্ধতি
অংশগ্রহণমূলক শিক্ষণ-শিখন পদ্ধতি
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা আজ ৩টি ধারায় বিভক্ত আর এই ধারাকে যদি এক করা না যায় তবে শিক্ষাটা মানুষের কাছে পৌছানো যাবে না। তিন রকম শিক্ষা পদ্ধতির মধ্যে যদি পারস্পরিক সর্ম্পক এবং যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা না যায়, তাহলে শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে একটা কার্যকর পরিবর্তন আনা যাবে না। পারস্পরিক দুরত্ব একে অন্যের প্রতি অবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলছে। যদি এই রকম একটা উদ্যোগ গড়ে তোলা যেত যে, স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার সকল শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও কমিটির সকল সদস্য এক জায়গায় বসে শিক্ষা সংস্কারের উদ্যোগ নিচ্ছে তবে আমার মত যারা দেশের সকল মানুষের কাছে শিক্ষার আলো পৌঁছে যাক চিন্তাটা করে তারা সকলে খুশি হত। আর এই ব্যবস্থার ফলে শিক্ষার উন্নয়ন ও কোন ব্যবস্থায় কি ঘাটতি রয়েছে তাও সুস্পষ্ট হতে পারত। এখানে আমরা এক হতে পারছি না নানা স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট কারণে। সেখানেই আমাদের জাতীয় বিপত্তির সমস্ত উৎস। আর আমরা যদি এক হতে পারতাম তাহলে শিক্ষা পদ্ধতিগুলোর মধ্যে লুকিয়ে থাকা শূণ্যতার অবসান হতে পারত, শিক্ষার আলো আরো গতি পেত এবং শিক্ষার মূলে যে শূণ্যতা তাও শেষ হতে পারত। কিন্তু আমরা পারিনি।
শিক্ষার আদর্শ-উদ্দেশ্য সর্ম্পকে বিশেষ কোনো সচেতনতাই এখন আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার অভ্যন্তরে-এমনকি গোটা জাতির অভ্যন্তরে-দেখা যাচ্ছে না। জাতিকে বিশ্বের কাছাকাছি, সভ্যতার কাছাকাছি যেতে হলে এই অবস্থার অবসান জরুরি। উন্নত দেশ গুলোর আধুনিক শিক্ষার ধারণা আমাদের নিতে হবে, শিক্ষাকে সকলের কাছে পৌঁছে দেয়ার সচেতন মন-মানসিকতার উদয় ঘটাতে হবে,তবেই শিক্ষা আর শিক্ষিত দু’য়ের মধ্যে ব্যবধানটা কমে আসবে।
অংশগ্রহণমূলক শিক্ষণ-শিখন পদ্ধতি
আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আদিকাল থেকে জগ-মগ পদ্ধতির শ্রেণী শিক্ষা ব্যবস্থা চলে আসছে। এই পদ্ধতির মূল কথা হল, ‘যিনি শিক্ষক তার কাছে জগ ভর্তি জ্ঞান আছে তিনি জ্ঞান শূণ্য শিক্ষার্থীর মগে জ্ঞান বিতরণ করবেন।’ এখনও সেই শূণ্যতা আমাদের যায়নি। এখনও শিক্ষক দেন,শিক্ষার্থী নেন। এখানে শিক্ষার্থীর উন্নয়ন বিষয় নয়। আমরা এখনও শ্রেণী কক্ষে প্রবেশ করে জানি না শিক্ষার্থী কি জ্ঞান নেন এবং শিক্ষকরা কি জ্ঞান দেন। মূলত ‘শিক্ষণীয় বিষয়বস্তুর শিক্ষক-শিখন কার্যক্রমে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের সু-নিশ্চিত ও সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে পারস্পারিক সহযোগিতায় যথার্থ জ্ঞান অর্জন করার প্রক্রিয়াগত পদ্ধতিগুলোকেই অংশগ্রহণমূলক শিক্ষণ-শিখন পদ্ধতি বা টের্রধডধযর্টমরহ কণটডদধভথ ীণটরভধভথ ইযযরমটডদ বলা হয়।’
শিক্ষার্থী জানতে চাইবে শিক্ষক জানাবেন, শিক্ষক প্রশ্ন করবে শিক্ষার্থী উত্তর দিবে। এই রকম পরিবেশকে সাধারণত আমরা অংশগ্রহণ মূলক বলব। কিন্তু এখনও কি তা হচ্ছে ? উত্তর অবশ্যই না। আমার এক শিক্ষার্থী অভিভাবককে প্রশ্ন করেছে ‘মা রিক্সার চাকা কি খায়?’ অভিভাবক কোন উত্তর করতে পারেননি। তিনি বরং শিক্ষার্থীকে থামিয়ে দিয়েছেন। এখানে অপরাধ হয়নি, কারণ মা শিক্ষকতার প্রশিক্ষণ নেননি। কিন্তু কোন শিক্ষার্থী যদি তার শিক্ষককে এমন প্রশ্ন করতেন তাহলে সেই শিক্ষক যদি শিক্ষার্থীকে থামিয়ে দিতেন অংশগ্রহণমূলক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হত।
সুতরাং অংশগ্রহণমূলক শিক্ষা একটি নতুন চেতনা। এই প্রক্রিয়ায় শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী উভয়ই সক্রিয় থাকেন। বিষয় ভিত্তিক জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে এটি অতি গুরুত্বপূর্ণও বটে। এটিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর যৌথ কৌশল হিসাবে পরিগণিত করা হয়। বিষয় ভিত্তিক জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে অংশগ্রহণমূলক শিক্ষণ পদ্ধতির কোন বিকল্প নাই। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের সুনিশ্চিত অংশগ্রহণের যে প্রক্রিয়া বা আচরণ তাকে অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতি বলা হয়। এই পদ্ধতি সম্পূর্ণ শিক্ষার্থী নির্ভর বলে একে শিক্ষার সবচেয়ে সুন্দর প্রক্রিয়া হিসাবে অবহিত করা হয়। কারণ এখানে ছাত্র-শিক্ষক উভয়ই শিক্ষার্থী। এই প্রক্রিয়ায় শিক্ষক শুধুমাত্র একজন ফেসিলিটেটর, সাহায্যকারী, নির্দেশক বা পরিচালকের ভুমিকায় অবতীর্ণ। শিক্ষক জ্ঞান দিবেন আর শিক্ষার্থী শুধু গিলবেন, এখন এই ব্যবস্থা অকার্যকর। এই পদ্ধতি মূল বক্তব্য হল, শেয়ার করণ, জ্ঞানের আদান প্রদান ও সক্রিয় কাজ করার মাধ্যম। এক্ষেত্রে-ব্যবহার উপযোগি কতগুলো শিক্ষা পদ্ধতি বা কৌশল রয়েছে যা শ্রেণীতে বাস্তবভিত্তিক প্রয়োগের মাধ্যমে শ্রেণীকে আকষর্ণীয় ও শিক্ষার্থীর জ্ঞান আরোহণের স্থল হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে-
ক. মুক্ত চিন্তার ঝড়
খ. জোড়ায় শিক্ষণ
গ. যৌথ আলোচনা
ঘ. মুখাভিনয়
ঙ. প্রশ্ন উত্তর
চ. সমস্যা সমাধান
ছ. প্যানেল আলোচনা করা
জ. দৃশ্যমান উপস্থাপন করা।
এই প্রক্রিয়ার নানা কৌশল : অংশগ্রহণমূলক শিক্ষণ-শিখন পদ্ধতির নানা কৌশল রয়েছে। আধুনিক শিক্ষাবিদগণ এই পদ্ধতির কৌশল বর্ণনা করতে গিয়ে মূলত সুন্দর ও বিধিসম্মত কয়েকটি কৌশল সর্ম্পকে বর্ণনা করেছেন। সেই কৌশলগুলো শ্রেণীকক্ষে ব্যবহার করতে পারলে একজন শিক্ষক যেমন শ্রেণীতে সফল হবেন তেমনি শিক্ষার্থীও তার কাছ থেকে সঠিক পদ্ধতির শিক্ষা নিতে সক্ষম হবেন। আমাদের দেশে শিক্ষকরা শিক্ষা বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী বিএড, এমএড্ নিচ্ছেন এখন শুধু স্কেল উত্তরণের চিন্তা করেই। আমার সমালোচনা না ভাবলে একথাটাও সত্যি যে এই ডিগ্রী অর্জনের ক্ষেত্রেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত সর্ম্পক ও আদান-প্রদানের মাধ্যমে ফাস্ট ক্লাস পাইয়ে দেয়ার নজিরও কম নয়। অনেক বিএড, এমএড্ ডিগ্রীধারীকে আমি দেখেছি শ্রেণী কক্ষের নূণ্যতম আচরণগত শিক্ষাটাও তাদের কাছে জানা নাই। অংশগ্রহণশূলক শিক্ষণ-শিখন পদ্ধতির প্রয়োগ একজন শিক্ষার্থীর সার্বিক মানবীয় গুণ ও কৌশলকে পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়। তাই এই পদ্ধতির ৪টি দিককে শিক্ষাপন্ডিতরা বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন-দিকগুলো হল-
ক. একক কাজ
খ. জোড়ায় কাজ
গ. ত্রৈত কাজ
ঘ. দলগত কাজ।
এই প্রক্রিয়ার গুরুত্ব : বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান চর্চা আনন্দময় হয়, কাজের উৎসাহ যোগায়, সর্ম্পক সুন্দর হয়, মানবীয় চেতনা জাগ্রত হয়, অমনযোগিতা দুর হয়, মূল্যায়নটা যথার্থ হয়, অর্জিত জ্ঞান দীর্ঘস্থায়ী হয়, শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয় সক্রিয় থাকে, অল্প সময়ে অধিক কাজ করা যায়। তাই প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বের উপযোগি করে একজন নাগরিককে গড়ে তোলার কাজটি করেন শিক্ষক, শিক্ষক যদি কৌশলী হন শিক্ষার্থীও কৌশলী হবেন এবং যুদ্ধ ক্ষেত্রে জয়ের জন্য লড়াই করবেন। আর শিক্ষক যদি নিজেই লড়াইবাজ না হন, তার শিক্ষার্থী কিভাবে সেই লড়াইয়ে জিততে পারবে ? তাই যথার্থ জ্ঞান আরোহণের জন্য প্রয়োজন একজন নিবেদিত প্রাণ মানুষের। যিনি নিজেই স্বপ্নের ফেরীওয়ালা হবেন, যিনি নিজেই স্বপ্নটাকে ঘিরে কাজ করবেন, তার সাথে যারা থাকবে তারাও সেই স্বপ্নটাকে বহন করবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সর্ম্পক হবে একজন অভিভাবক ও সন্তানের। তাই শ্রেণীকক্ষে শুধু নিজের জ্ঞানের জাহির না করে বরং শিক্ষার্থীকেও তার অংশীদার রূপে কাজ করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। তবে প্রকৃত মেধা বের হবে এবং শ্রেণী কক্ষ হবে আনন্দদায়ক-শিক্ষাবন্ধব।
অংশগ্রহণমূলক শিক্ষণ-একটি খেলা: শিক্ষক শ্রেণীতে পাঠ দেয়ার ক্ষেত্রে একে ফলপ্রসু, আনন্দঘন ও সার্থক করার সময় অংশগ্রহণ করার উপযোগি যেসব শিখন খেলার প্রবর্তন করেন তাদেরই বলা হবে অংশগ্রহণমূলক শিক্ষণ খেলা। শ্রেণীর বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান সঞ্চালনের ক্ষেত্রে যেসব কৌশল ও পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে একঘেয়েমী থেকে শিক্ষার্থীকে দূরে রাখার জন্যে তা হবে শিক্ষণ খেলা। শ্রেণী শিক্ষক হবেন এই খেলার প্রবর্তক, নিয়ন্ত্রক, পরিচালক বা প্রধান কৌশলী। তিনি এই বিষয়ে সর্বসয় দাযিত্ব পালন করবেন। তিনি শ্রেণীতে নতুন কিছু উদ্ভাবন করবেন, বির্তকের ঝড় তুলবেন,গল্প করবেন, কৌতুক ও নীরব পঠন ব্যবস্থা করবেন, সরব ও উদ্দীপ্ত করণে শিক্ষার্থীদের মাঝে এই পদ্ধতির প্রয়োগ কিভাবে করতে হয় তা শিখাবেন। মূল কথা এই পদ্ধতির প্রয়োগের ফলে একজন শিক্ষক যে কিভাবে শ্রেণীতে তার দক্ষতা শিক্ষার্থীর মাঝে জনপ্রিয় শিক্ষক হিসাবে বিবেচিত হবেন তা তিনি বুঝতেও পারবেন না। শিক্ষক এমন হবেন তার ক্লাস গ্রহণ করার জন্য শুধু শ্রেণীতে শিক্ষার্থী আসবে। তবে তিনি সার্থক শিক্ষক ও মানুষ হতে পারবেন। কোন কারণ ছাড়া শিক্ষার্থী তাকে অনুসরণ করবেন, এই প্রক্রিয়া যথাথথ ভাবে পরিচালনায় যিনি ব্যর্থ হবেন তিনি শিক্ষকতায় সফল হতে পারবেন না। তাই অংশগ্রহণমূলক শিক্ষার মাধ্যমে সমাজে শিক্ষার আলো বিস্তার লাভ করশুক,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়ে উঠুক শিক্ষার্থীর আনন্দময় স্থান, শিক্ষকরা হউক স্বপ্নের ফেরীওলা আর শিক্ষার্থী হউক সেই স্বপ্নের আধুনিক মানুষ। তাহলে একদিন বলতে পারব এই সুন্দর দেশের সভ্য-শিক্ষিত নাগরিক আমিও।অংশগ্রহণমূলক শিক্ষণ-শিখন পদ্ধতি
ড. মুহাম্মদ কামাল উদ্দিন
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা আজ ৩টি ধারায় বিভক্ত আর এই ধারাকে যদি এক করা না যায় তবে শিক্ষাটা মানুষের কাছে পৌছানো যাবে না। তিন রকম শিক্ষা পদ্ধতির মধ্যে যদি পারস্পরিক সর্ম্পক এবং যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা না যায়, তাহলে শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে একটা কার্যকর পরিবর্তন আনা যাবে না। পারস্পরিক দুরত্ব একে অন্যের প্রতি অবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলছে। যদি এই রকম একটা উদ্যোগ গড়ে তোলা যেত যে, স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার সকল শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও কমিটির সকল সদস্য এক জায়গায় বসে শিক্ষা সংস্কারের উদ্যোগ নিচ্ছে তবে আমার মত যারা দেশের সকল মানুষের কাছে শিক্ষার আলো পৌঁছে যাক চিন্তাটা করে তারা সকলে খুশি হত। আর এই ব্যবস্থার ফলে শিক্ষার উন্নয়ন ও কোন ব্যবস্থায় কি ঘাটতি রয়েছে তাও সুস্পষ্ট হতে পারত। এখানে আমরা এক হতে পারছি না নানা স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট কারণে। সেখানেই আমাদের জাতীয় বিপত্তির সমস্ত উৎস। আর আমরা যদি এক হতে পারতাম তাহলে শিক্ষা পদ্ধতিগুলোর মধ্যে লুকিয়ে থাকা শূণ্যতার অবসান হতে পারত, শিক্ষার আলো আরো গতি পেত এবং শিক্ষার মূলে যে শূণ্যতা তাও শেষ হতে পারত। কিন্তু আমরা পারিনি।
শিক্ষার আদর্শ-উদ্দেশ্য সর্ম্পকে বিশেষ কোনো সচেতনতাই এখন আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার অভ্যন্তরে-এমনকি গোটা জাতির অভ্যন্তরে-দেখা যাচ্ছে না। জাতিকে বিশ্বের কাছাকাছি, সভ্যতার কাছাকাছি যেতে হলে এই অবস্থার অবসান জরুরি। উন্নত দেশ গুলোর আধুনিক শিক্ষার ধারণা আমাদের নিতে হবে, শিক্ষাকে সকলের কাছে পৌঁছে দেয়ার সচেতন মন-মানসিকতার উদয় ঘটাতে হবে,তবেই শিক্ষা আর শিক্ষিত দু’য়ের মধ্যে ব্যবধানটা কমে আসবে।
অংশগ্রহণমূলক শিক্ষণ-শিখন পদ্ধতি
আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আদিকাল থেকে জগ-মগ পদ্ধতির শ্রেণী শিক্ষা ব্যবস্থা চলে আসছে। এই পদ্ধতির মূল কথা হল, ‘যিনি শিক্ষক তার কাছে জগ ভর্তি জ্ঞান আছে তিনি জ্ঞান শূণ্য শিক্ষার্থীর মগে জ্ঞান বিতরণ করবেন।’ এখনও সেই শূণ্যতা আমাদের যায়নি। এখনও শিক্ষক দেন,শিক্ষার্থী নেন। এখানে শিক্ষার্থীর উন্নয়ন বিষয় নয়। আমরা এখনও শ্রেণী কক্ষে প্রবেশ করে জানি না শিক্ষার্থী কি জ্ঞান নেন এবং শিক্ষকরা কি জ্ঞান দেন। মূলত ‘শিক্ষণীয় বিষয়বস্তুর শিক্ষক-শিখন কার্যক্রমে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের সু-নিশ্চিত ও সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে পারস্পারিক সহযোগিতায় যথার্থ জ্ঞান অর্জন করার প্রক্রিয়াগত পদ্ধতিগুলোকেই অংশগ্রহণমূলক শিক্ষণ-শিখন পদ্ধতি বা টের্রধডধযর্টমরহ কণটডদধভথ ীণটরভধভথ ইযযরমটডদ বলা হয়।’
শিক্ষার্থী জানতে চাইবে শিক্ষক জানাবেন, শিক্ষক প্রশ্ন করবে শিক্ষার্থী উত্তর দিবে। এই রকম পরিবেশকে সাধারণত আমরা অংশগ্রহণ মূলক বলব। কিন্তু এখনও কি তা হচ্ছে ? উত্তর অবশ্যই না। আমার এক শিক্ষার্থী অভিভাবককে প্রশ্ন করেছে ‘মা রিক্সার চাকা কি খায়?’ অভিভাবক কোন উত্তর করতে পারেননি। তিনি বরং শিক্ষার্থীকে থামিয়ে দিয়েছেন। এখানে অপরাধ হয়নি, কারণ মা শিক্ষকতার প্রশিক্ষণ নেননি। কিন্তু কোন শিক্ষার্থী যদি তার শিক্ষককে এমন প্রশ্ন করতেন তাহলে সেই শিক্ষক যদি শিক্ষার্থীকে থামিয়ে দিতেন অংশগ্রহণমূলক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হত।
সুতরাং অংশগ্রহণমূলক শিক্ষা একটি নতুন চেতনা। এই প্রক্রিয়ায় শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী উভয়ই সক্রিয় থাকেন। বিষয় ভিত্তিক জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে এটি অতি গুরুত্বপূর্ণও বটে। এটিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর যৌথ কৌশল হিসাবে পরিগণিত করা হয়। বিষয় ভিত্তিক জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে অংশগ্রহণমূলক শিক্ষণ পদ্ধতির কোন বিকল্প নাই। শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের সুনিশ্চিত অংশগ্রহণের যে প্রক্রিয়া বা আচরণ তাকে অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতি বলা হয়। এই পদ্ধতি সম্পূর্ণ শিক্ষার্থী নির্ভর বলে একে শিক্ষার সবচেয়ে সুন্দর প্রক্রিয়া হিসাবে অবহিত করা হয়। কারণ এখানে ছাত্র-শিক্ষক উভয়ই শিক্ষার্থী। এই প্রক্রিয়ায় শিক্ষক শুধুমাত্র একজন ফেসিলিটেটর, সাহায্যকারী, নির্দেশক বা পরিচালকের ভুমিকায় অবতীর্ণ। শিক্ষক জ্ঞান দিবেন আর শিক্ষার্থী শুধু গিলবেন, এখন এই ব্যবস্থা অকার্যকর। এই পদ্ধতি মূল বক্তব্য হল, শেয়ার করণ, জ্ঞানের আদান প্রদান ও সক্রিয় কাজ করার মাধ্যম। এক্ষেত্রে-ব্যবহার উপযোগি কতগুলো শিক্ষা পদ্ধতি বা কৌশল রয়েছে যা শ্রেণীতে বাস্তবভিত্তিক প্রয়োগের মাধ্যমে শ্রেণীকে আকষর্ণীয় ও শিক্ষার্থীর জ্ঞান আরোহণের স্থল হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে-
ক. মুক্ত চিন্তার ঝড়
খ. জোড়ায় শিক্ষণ
গ. যৌথ আলোচনা
ঘ. মুখাভিনয়
ঙ. প্রশ্ন উত্তর
চ. সমস্যা সমাধান
ছ. প্যানেল আলোচনা করা
জ. দৃশ্যমান উপস্থাপন করা।
এই প্রক্রিয়ার নানা কৌশল : অংশগ্রহণমূলক শিক্ষণ-শিখন পদ্ধতির নানা কৌশল রয়েছে। আধুনিক শিক্ষাবিদগণ এই পদ্ধতির কৌশল বর্ণনা করতে গিয়ে মূলত সুন্দর ও বিধিসম্মত কয়েকটি কৌশল সর্ম্পকে বর্ণনা করেছেন। সেই কৌশলগুলো শ্রেণীকক্ষে ব্যবহার করতে পারলে একজন শিক্ষক যেমন শ্রেণীতে সফল হবেন তেমনি শিক্ষার্থীও তার কাছ থেকে সঠিক পদ্ধতির শিক্ষা নিতে সক্ষম হবেন। আমাদের দেশে শিক্ষকরা শিক্ষা বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী বিএড, এমএড্ নিচ্ছেন এখন শুধু স্কেল উত্তরণের চিন্তা করেই। আমার সমালোচনা না ভাবলে একথাটাও সত্যি যে এই ডিগ্রী অর্জনের ক্ষেত্রেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত সর্ম্পক ও আদান-প্রদানের মাধ্যমে ফাস্ট ক্লাস পাইয়ে দেয়ার নজিরও কম নয়। অনেক বিএড, এমএড্ ডিগ্রীধারীকে আমি দেখেছি শ্রেণী কক্ষের নূণ্যতম আচরণগত শিক্ষাটাও তাদের কাছে জানা নাই। অংশগ্রহণশূলক শিক্ষণ-শিখন পদ্ধতির প্রয়োগ একজন শিক্ষার্থীর সার্বিক মানবীয় গুণ ও কৌশলকে পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়। তাই এই পদ্ধতির ৪টি দিককে শিক্ষাপন্ডিতরা বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন-দিকগুলো হল-
ক. একক কাজ
খ. জোড়ায় কাজ
গ. ত্রৈত কাজ
ঘ. দলগত কাজ।
এই প্রক্রিয়ার গুরুত্ব : বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান চর্চা আনন্দময় হয়, কাজের উৎসাহ যোগায়, সর্ম্পক সুন্দর হয়, মানবীয় চেতনা জাগ্রত হয়, অমনযোগিতা দুর হয়, মূল্যায়নটা যথার্থ হয়, অর্জিত জ্ঞান দীর্ঘস্থায়ী হয়, শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয় সক্রিয় থাকে, অল্প সময়ে অধিক কাজ করা যায়। তাই প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বের উপযোগি করে একজন নাগরিককে গড়ে তোলার কাজটি করেন শিক্ষক, শিক্ষক যদি কৌশলী হন শিক্ষার্থীও কৌশলী হবেন এবং যুদ্ধ ক্ষেত্রে জয়ের জন্য লড়াই করবেন। আর শিক্ষক যদি নিজেই লড়াইবাজ না হন, তার শিক্ষার্থী কিভাবে সেই লড়াইয়ে জিততে পারবে ? তাই যথার্থ জ্ঞান আরোহণের জন্য প্রয়োজন একজন নিবেদিত প্রাণ মানুষের। যিনি নিজেই স্বপ্নের ফেরীওয়ালা হবেন, যিনি নিজেই স্বপ্নটাকে ঘিরে কাজ করবেন, তার সাথে যারা থাকবে তারাও সেই স্বপ্নটাকে বহন করবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী সর্ম্পক হবে একজন অভিভাবক ও সন্তানের। তাই শ্রেণীকক্ষে শুধু নিজের জ্ঞানের জাহির না করে বরং শিক্ষার্থীকেও তার অংশীদার রূপে কাজ করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। তবে প্রকৃত মেধা বের হবে এবং শ্রেণী কক্ষ হবে আনন্দদায়ক-শিক্ষাবন্ধব।
অংশগ্রহণমূলক শিক্ষণ-একটি খেলা: শিক্ষক শ্রেণীতে পাঠ দেয়ার ক্ষেত্রে একে ফলপ্রসু, আনন্দঘন ও সার্থক করার সময় অংশগ্রহণ করার উপযোগি যেসব শিখন খেলার প্রবর্তন করেন তাদেরই বলা হবে অংশগ্রহণমূলক শিক্ষণ খেলা। শ্রেণীর বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান সঞ্চালনের ক্ষেত্রে যেসব কৌশল ও পদ্ধতি প্রয়োগ করা হবে একঘেয়েমী থেকে শিক্ষার্থীকে দূরে রাখার জন্যে তা হবে শিক্ষণ খেলা। শ্রেণী শিক্ষক হবেন এই খেলার প্রবর্তক, নিয়ন্ত্রক, পরিচালক বা প্রধান কৌশলী। তিনি এই বিষয়ে সর্বসয় দাযিত্ব পালন করবেন। তিনি শ্রেণীতে নতুন কিছু উদ্ভাবন করবেন, বির্তকের ঝড় তুলবেন,গল্প করবেন, কৌতুক ও নীরব পঠন ব্যবস্থা করবেন, সরব ও উদ্দীপ্ত করণে শিক্ষার্থীদের মাঝে এই পদ্ধতির প্রয়োগ কিভাবে করতে হয় তা শিখাবেন। মূল কথা এই পদ্ধতির প্রয়োগের ফলে একজন শিক্ষক যে কিভাবে শ্রেণীতে তার দক্ষতা শিক্ষার্থীর মাঝে জনপ্রিয় শিক্ষক হিসাবে বিবেচিত হবেন তা তিনি বুঝতেও পারবেন না। শিক্ষক এমন হবেন তার ক্লাস গ্রহণ করার জন্য শুধু শ্রেণীতে শিক্ষার্থী আসবে। তবে তিনি সার্থক শিক্ষক ও মানুষ হতে পারবেন। কোন কারণ ছাড়া শিক্ষার্থী তাকে অনুসরণ করবেন, এই প্রক্রিয়া যথাথথ ভাবে পরিচালনায় যিনি ব্যর্থ হবেন তিনি শিক্ষকতায় সফল হতে পারবেন না। তাই অংশগ্রহণমূলক শিক্ষার মাধ্যমে সমাজে শিক্ষার আলো বিস্তার লাভ করশুক,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়ে উঠুক শিক্ষার্থীর আনন্দময় স্থান, শিক্ষকরা হউক স্বপ্নের ফেরীওলা আর শিক্ষার্থী হউক সেই স্বপ্নের আধুনিক মানুষ। তাহলে একদিন বলতে পারব এই সুন্দর দেশের সভ্য-শিক্ষিত নাগরিক আমিও।
ড. মুহাম্মদ কামাল উদ্দিন
Comments
Post a Comment